ঢাকা , রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এনবিআর কমপ্লিট শাটডাউন ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিয়মে বাঁধছে সরকার বরগুনায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগী, জায়গা হচ্ছে না হাসপাতালে সারাদেশে গ্রেফতার ১৫৪০ জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ঘিরে জামায়াতের ৩৬ দিনের কর্মসূচি জামিনে থাকা অ’লীগ নেতাকে ধরে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে ২ গৃহবধূর আত্মহত্যা শ্রীপুরে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত আগস্টে ঢাকার ৩ এলাকায় চালু হবে ই-রিকশা ভালুকায় জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধার আটক-৫ বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়ার মৃত্যু কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের অবহেলা করে প্রাথমিক শিক্ষা সম্ভব নয় -মাহমুদ সোহেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে হবে- রিজভী গুঁড়া দুধ আমদানির টাকা দিয়ে চিলিং সেন্টার করতে পারি- প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা দেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়ার শঙ্কা ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ আবারো গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেল ওয়ালটন হাই-টেক পাবনা-ঢাকা রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ
অচলাবস্থা কাটেনি ঢামেকে

লিখিত চান শিক্ষার্থীরা বাসা খুঁজতে বলছে মন্ত্রণালয়

  • আপলোড সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০৪:৪১:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০৪:৪১:৪৪ অপরাহ্ন
লিখিত চান শিক্ষার্থীরা বাসা খুঁজতে বলছে মন্ত্রণালয়
খসে পড়ছে পলেস্তরা। ড্যাম হয়ে গেছে দেওয়াল। যে কোনো মুহূর্তে মাথার ওপর ভেঙে পড়তে পারে ছাদ। এ হেন অবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরাজীর্ণ হলগুলোর। প্রকৃত অর্থেই বসবাসের উপযোগী নয় হলগুলো। এমন অবস্থায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এরই জেরে ২২ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এই বিদ্যাপীঠ। গেলো একমাস যাবত নতুন হল নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি ঈদের পর নতুন ব্যাচের নবীনবরণ অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি তারা। এরপর একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ডেকে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। যদিও সেই নির্দেশনা তারা মানছেন না।
ক্লাসে ফিরছেন না শিক্ষার্থীরা। আবার কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেও হল ছাড়েননি। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সন্তুষ্ট হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর রুষ্ট তারা। মৌখিক কোনো আশ্বাস নয়, দাবি পূরণে লিখিত প্রতিশ্রুতি চান শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, শিক্ষকরা বলছেন, উন্নয়ন কাজ তো আমাদের হাতে নেই। আমরা কীভাবে প্রতিশ্রুতি দেবো, তাও লিখিত? বিগত সরকার ‘স্বপ্নের স্বাক্ষর’ নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণে ২৭ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নিলেও কোনো কাজই করেনি। যেখানে ব্রিটিশ আমলের পুরোনো ছাত্রাবাসেই থাকছেন দেশসেরা এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত ২২ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকৃতার্থেই হলগুলো থাকার উপযোগী নয়। ছাত্র-শিক্ষকরা জানিয়েছেন, একটি হলের একটি ফ্লোর পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত বিভাগ। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে বাকি রুমগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী সিট বরাদ্দ দিতে চায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। আপত্তি শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, নতুন হল নির্মাণ করতে হবে। শিক্ষকরাও বলছেন নতুন হল প্রয়োজন। কিন্তু নতুন হল হওয়ার আগ পর্যন্ত তো একাডেমিক ও আবাসিক কাজ চালিয়ে নিতে হবে। এজন্য তারা নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে চান। এটি মানতে নারাজ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নতুন ব্যাচকে বাসা ভাড়া করে রাখতে হবে। পুরোনোদের আপাতত এখানে রেখেই দ্রুত হল নির্মাণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক বসেন শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তাদের সঙ্গে বসেন। সবার কথা শোনেন। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে স্বীকার করেন। শিগগির এগুলো পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। বিশেষ করে আশ্বস্ত করেন, নতুন ব্যাচের জন্য বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করবেন। আর নতুন হল নির্মাণের অনুমোদন দ্রুতই যেন একনেকে অনুমোদিত হয়, সেই চেষ্টা চালাবেন। ছাত্রপ্রতিনিধি তানভীর বলেন, আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং আশ্বস্ত হয়েছি। পরবর্তী করণীয় নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করবো।
মঙ্গলবার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা বলেন, বৈঠকে তারা কে-৮২ ব্যাচের আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে সুস্পষ্ট কোনো সমাধান দিতে না পারায় তারা ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শিগগির কর্তৃপক্ষ কে-৮২ এর আবাসনের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেবেন এবং তারাও আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরতে পারবেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকে এক রুমে একজন বা দুইজন করে থাকেন। যেখানে তিন-চার-পাঁচজনও থাকার সুযোগ আছে। এখন হল কর্তৃপক্ষ সিট বণ্টন করলে সবার সংকুলানের জন্য তিন-চার-পাঁচজন হারেই করবেন, যেটি মানতে নারাজ বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা চান, এখন যেভাবে আছে থাকুক। দ্রুত নতুন হল নির্মাণ হোক। নতুন হল হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন ব্যাচকে বাসা ভাড়া করে রাখুক। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২৩ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠকে তাদেরকে বাসা খুঁজতে বলা হয়েছে। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ বলছে, যে অবকাঠামো আছে, তাতে বর্তমান নতুন ব্যাচসহ সব শিক্ষার্থীর সংকুলান হবে। প্রয়োজনে তারা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডরমেটরিতে নিয়ে যাবে। তিনটি হলেই শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেবে।
এ বিষয়ে ছাত্রদের প্রতিনিধি তৌহিদুল আবেদীন তানভীর বলেন, আমাদের হল ও একাডেমিক ভবন অনেক পুরোনো, পলেস্তরা খসে পড়ে। এরই মধ্যে হলের চারতলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ চারতলা থেকে নামিয়ে একই ভবনের অন্যান্য রুমে আমাদের দিতে চায়। আমাদের কথা হলো, হলের চারতলা ভেঙে পড়লে তো পুরো ভবনই ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে। তিনি বলেন, আমাদের সাত-আট বছর থেকে আশা দেখানো হচ্ছে, নতুন হল হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকবে না। কিন্তু এটার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আমরা এটার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চাই। আমি বলছি না, এখনই ভবন এনে দেন। আমরা চাই একটা সুনির্দিষ্ট লিখিত নির্দেশনা। কাজ হচ্ছে, কাজের অগ্রগতি এই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল হবে, আবাসন হবে, এমন আশ্বাস দিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। ‘স্বপ্নের স্বাক্ষর’ নামের একটা পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু আমরা কোনো অগ্রগতি দেখি নাই। এখন আমরা লিখিতভাবে অগ্রগতি জানতে চাই, যোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত হল সুপার অধ্যাপক ডা. আহসান হাবিব বলেন, তারা যেটা চায়, এটা আমরাও চাই। এটা আমাদেরও দাবি। আমারও তো ভয় লাগে। কিন্তু এই এটা কি প্রিন্সিপাল স্যার বা আমাদের হাতে? এখানে একটা কাজ হলো মিনিমাম এক হাজার কোটি টাকার ব্যাপার। এই বরাদ্দ তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও হবে না। একনেকে পাস করতে হবে। কীভাবে প্রিন্সিপাল তাদের নিশ্চয়তা দিতে পারবে? এখন তো অন্তর্বর্তী সরকার, যদি এটা একনেকে গিয়ে ফেরত আসে? আমরা আমাদের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে দাবি জানাতে পারি যে, দ্রুত হোস্টেল বানিয়ে দেন। কিন্তু এটা তো সরকারের ক্যাপাসিটির মধ্যে থাকতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে হল নির্মাণের একটা প্রকল্প পাস হয়েছে। তন্মধ্যে দুটো হল অন্য জায়গা থেকে কেটে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা তাদের বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এসছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাতে তো তারা থামছে না। তাদের কথা হলো, কাজের অগ্রগতির ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। পরিত্যক্ত চারতলার বাইরে যে সিট আছে, নিয়ম অনুযায়ী সিট বণ্টন করলে আমরা তাদের সবার আবাসন নিশ্চিত করতে পারবো। যোগ করেন হল সুপার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি ও অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুল আলম বলেন, আমরা ছুটি ঘোষণার আগেই তারা কলেজ বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা ছুটি নিয়ে যায় নাই। তারপরও একটা অচলাবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা একটা পথ বের করতে সচেষ্ট। এরমধ্যে হল খালি করার নির্দেশ দিয়েছি। আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় ছাত্রদের নিরাপত্তা। পরিত্যক্ত চারতলায় কেন ছাত্ররা থাকবে? একটা বছর যাবত পারা যাচ্ছে না। তারা তো নামতেছে না, কারণ-তারা সিনিয়ররা এক রুমে দুইজনের বেশি থাকবে না। আমিও তো ওই মেডিকেলের ছাত্র আমাদের সময় তো এক রুমে তিনজন, চার-পাঁচজনও থেকেছি। এই কারণে তাদের রি-লোকেট করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমার টার্গেট দুইটা, আগে ২৪ ঘণ্টার অর্ডারে পরিত্যক্ত ফ্লোর থেকে নামতে হবে। তারপরে পুরো হল খালি হলে আমরা বরাদ্দ দিলে তারা সে অনুযায়ী উঠবে। এইভাবে ক্লাসে ফিরে যাবে, ইনশাআল্লাহ। ওরা আমাদের সন্তানের মতো। ওরা আন্দোলন করছে, এর সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু ওরা মনে করছে, এখনই সব সমাধান হয়ে যাবে, সেটা তো সম্ভব না।
 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স